ইমামাহ বা পাগড়ী পরিধানের মহাসম্মানিত সুন্নতী তারতীব

ইমামাহ বা পাগড়ী পরিধানের মহাসম্মানিত সুন্নতী তারতীব

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন প্রত্যেকের জন্য প্রত্যেক আমলের ব্যপারে আদর্শ মুবারক। সর্বক্ষেত্রে উনাকেই অনুসরণ করতে হবে। মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ ۗ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ ‎﴿٣١﴾‏
অর্থঃ- আয় আমার মহাসম্মানিত হাবীব ও মাহবূব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলুন, যদি তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার মুহাব্বত মুবারক চাও, তবে তোমরা আমাকে (আমার মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক সমূহকে) অনুসরণ কর, তবেই মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদেরকে মুহব্বত করবেন এবং তোমাদের সকল গুনাহ-খতা ক্ষমা করে দিবেন। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু। (পবিত্র সূরা আল ইমরান শরীফ-৩১)
তাই পাগড়ী পরিধানের ক্ষেত্রেও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সুন্নত মুবারক সমূহকে অনুসরণ-অনুকরণ করে সে অনুযায়ী পাগড়ী পরিধান করতে হবে। নিম্নে পাগড়ী পরিধানের মহাসম্মানিত সুন্নতী তারতীব উল্লেখ করা হলো-
১. সকল নেক কাজ যেরূপ পবিত্র তাসমিয়া শরীফ পাঠ করে শুরু করা মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক তদ্রুপ ইমামাহ বা পাগড়ী বাঁধার সময় ও পবিত্র তাসমিয়া শরীফ পাঠ করা মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক। যেমন এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে- بسم الله الرحمن الرحيم বলে পাগড়ী পরিধান করা মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক। (সিফরুস সায়াদাত, যুরকানী শরীফ ৬ষ্ঠ জিলদ ২০৮ পৃষ্ঠা)

২. পাগড়ী সূতী কাপড়ের হওয়া মহাম্মানিত সুন্নত মুবারক। (শামাইলুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
৩. ওযূর সহিত ইমামাহ বা পাগড়ী বাঁধা মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক। (হুজ্জাতুত্ তাম্মাহ্ ফী লুবসিল ইমামাহ ৫৬ পৃষ্ঠা)
৪. পাগড়ী ডান দিক থেকে বাঁধা শুরু করা মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক। কেননা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি প্রত্যেকটি কাজ ডান দিক থেকে শুরু করা পছন্দ মুবারক করতেন। (বুখারী শরীফ, ফতহুল বারী, উমদাতুল কারী)
৫. ইমামাহ বা পাগড়ী পরিধান করে দোয়া পাঠ করা মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নতুন জামা ও পাগড়ী পরিধান করে দোয়া মুবারক পাঠ করতেন। (আবূ দাউদ শরীফ ২য় জিলদ; ২০২ পৃষ্ঠা, যুরকানী শরীফ ৬ষ্ঠ জিলদ; ২০৮ পৃষ্ঠা)
নতুন লিবাস ও পাগড়ী পরিধান করার সময়, নি¤েœাক্ত দোয়া পাঠ করতে হয়-
اَللّٰهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ اَنْتَ كَسَوْتَنِيْهِ اَسْاَلُكَ مِنْ خَيْرِهٖ وَخَيْرِ مَا صَنَعَ لَهٗ وَاَعُوْذُبِكَ مِنْ شَرِّهٖ وَشَرِّ مَا صَنَعَ لَهٗ.
অর্থ: “আয় মহান আল্লাহ পাক ! আপনার জন্য সকল প্রশংসা মুবারক। আপনিই এ লিবাস আমাকে পরিয়েছেন। আমি আপনার কাছে এর মধ্যে নিহিত কল্যাণ ও এটি যেজন্য তৈরী করা হয়েছে, সেসব কল্যাণ আরজু করি। আমি এর অনিষ্টতা এবং এটি তৈরির অনিষ্টতা থেকে আপনার নিকট আশ্রয় কামনা করছি। ” (আবূ দাউদ ২য় জিলদ; ২০২পৃষ্ঠা, বযলুল মাজহুদ ৬ষ্ঠ জিলদ; ৩৯ পৃষ্ঠা, তিরমিযী শরীফ ১ম জিলদ; ২০৯পৃষ্ঠা, তুহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম জিলদ ৪৬০ পৃষ্ঠা, শামাইলুত্ তিরমিযী ৬পৃষ্ঠা ইত্যাদি)
৬. নতুন পাগড়ী পবিত্র জুমুয়ার দিন থেকে পরিধান করা মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক। (যাদুল্ মায়াদ)
হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নতুন কাপড় পবিত্র জুমুয়ার দিন থেকে পরিধান করা শুরু করতেন। ইমাম বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, কেউ যদি নতুন পোশাক (কামীছ, ইমামাহ ইত্যাদি) পরিধান করতে চায় তবে সে যেন তা পবিত্র জুমুয়ার দিন থেকে পরিধান করে। (তুহফাতুল আহওযায়ী ৫ম জিলদ; ৪৬১ পৃষ্ঠা)
৭. ইমামাহ বা পাগড়ী দাঁড়িয়ে বাঁধা মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক। আর বসে পাগড়ী বাঁধা মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক ও আদবের খিলাফ। এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে, মাদখালের মুছান্নিফ বলেন, তোমাদের জন্য সেলোয়ার বসে পরা এবং পাগড়ী দাঁড়িয়ে বাঁধা অপরিহার্য। (মিরকাত ৮ম জিলদ ২৫০ পৃষ্ঠা)
হাফিয বুরহানুদ্দীন নাজী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “কালাইদুল ইকয়ান” নামক কিতাবে উল্লেখ করেন, বসে পাগড়ী বাঁধা এবং দাঁড়িয়ে সেলোয়ার পরিধান করা দারিদ্রতা ডেকে আনে এবং মেধা শক্তি দুর্বল করে দেয়। (যুরকানী শরীফ ৬ষ্ঠ জিলদ; ২৫৮ পৃষ্ঠা)
৮. ইমামাহ বা পাগড়ীর নিচে টুপি পরিধান করা মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক। আমরা মুসলমানগণ টুপিসহ পাগড়ী পরিধান করি। আর মুশরিকরা টুপি ছাড়া পাগড়ী পরিধান করে থাকে।
কিতাবে বর্ণিত আছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমাদের (মুসলমানদের) ও মুশরিকদের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে টুপির ওপর পাগড়ী পরিধান। (অর্থাৎ আমরা মুসলমানগণ টুপিসহ পাগড়ী পরিধান করি আর মুশরিকরা টুপি ছাড়া পাগড়ী পরিধান করে। (আবূ দাউদ শরীফ ২য় জিলদ ২০৯ পৃষ্ঠা)
৯. পাগড়ী মজবুত করে বাঁধা মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক। যাতে সহজে খুলে না যায়।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ওযূ করতে দেখেছি যখন উনার মহাসম্মানিত নূরুল হুদা মুবারক (মহাসম্মানিত মহাপবিত্র মাথা মুবারক) উনার মধ্যে কাতারের মহাসম্মানিত পাগড়ী মুবারক বাঁধা ছিলো। অতঃপর তিনি উনার মহাসম্মানিত নূরুল মাগফিরাত (মহাসম্মানিত হাত মুবারক) মহাসম্মানিত পাগড়ী মুবারক উনার নীচ দিয়ে প্রবেশ করিয়ে মহাসম্মানিত নূরুল হুদা মুবারক (মহাসম্মানিত মহাপবিত্র মাথা মুবারক) উনার সম্মুখভাগ মাসেহ করলেন। কিন্তু এতে মহাসম্মানিত পাগড়ী মুবারক ভেঙ্গে যায় নি। (আবূ দাউদ শরীফ ১ম জিলদ; ২২ পৃষ্ঠা, পবিত্র হাদীছ শরীফ নং: ১৪৭, ইবনে মাজাহ শরীফ)

Post Your Comment

Build Your Website with AQAIT

From professional business to enterprise, we’ve got you covered!